প্রকাশিত: Sat, Feb 11, 2023 6:24 AM
আপডেট: Fri, Jun 27, 2025 1:18 PM

ঘাতকদের জানানো দরকার ছিলো, তোমরা অভিজিতকে হত্যা করতে পারো, কিন্তু তাকে হত্যা করার সাধ্য কারও নেই

ইমতিয়াজ মাহমুদ ; বইমেলায় তো যাওয়া দরকার কয়েকদিন। এর মধ্যে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম, ব্যক্তিগত নানা ইয়ের জন্যে এই কদিন কার্যত নিশ্বাসই নিতে পারিনি মুক্তভাবে। মনে পড়লো বহু বছর হয়ে গেলো কবিতার বই খুব একটা কেনা হয়নি। মাঝখানে আমাদের রাহাতের কাব্যগ্রন্থ বেরিয়েছিল অনেক আগে, সেটা কিনেছিলেম। এর বছর দুয়েক পর দুপুরে জোনাকি নামে একটাÑ এই কবছরে এইরকম গোটা পাঁচেক হবে হয়তো। সেদিন কাগজে দেখলাম, নির্মলেন্দু গুণের নতুন কাব্যগ্রন্থের আলোচনা করেছে ওরা। আহা গুণ, নির্মলেন্দু গুণ! কতো বছর হয়ে গেলো আপনার কোন কবিতার বই কেনা হয়নি। এবার কিনব। বইমেলায় না গেলেও কিনব- পাক্কা। 

বইমেলা কি পানসে হয়ে গেছে? আমার পক্ষে বলা কঠিন। হুমায়ুন আজাদ যুগের পর আমি কদিন বইমেলায় গেছি সেটা আঙ্গুলে গুণে বলে দিতে পারব। গত বারো তেরো বছরে আমাদের দেশি লেখকদের নতুন কোনো উপন্যাস পড়িনি। ফারিসা মাহমুদের একটা উপন্যাস পড়েছি, আমার বোন না হলে ওর ওটাও হতো পড়তাম না। এইরকম চেনা লেখকদের গল্প উপন্যাস কয়েকটা পড়েছি। সেই চেনা বলেই। ভারতীয় বাংলা লেখকদের দুইটা কি তিনটা হয়তো পড়েছি। বুড়োরা ছাড়া আর উপন্যাস লেখেন এমন কোনো নতুন লেখকের নামও জানি না। এর মানে হচ্ছে যে বইমেলা বা ঢাকায় প্রকাশিত বাংলা সৃজনশীল লেখা তিয়াদি সম্পর্কে আমার মতামতের আসলে কোনো গুরুত্ব নেই। 

বইমেলায় যাবো ভাবলে একটু বেদনা হয়Ñ স্মৃতি জাগে, নানা জনের কথা মনে পড়ে। হুমায়ুন আজাদ তো নেই। হুমায়ূন আহমেদও নেই। হুমায়ূন আহমেদ কী রকম লোকপ্রিয় ছিলেন, সেটা কি ভুলে গেছেন? আমার ধারণা হুমায়ূন আহমেদের মতো জনপ্রিয় ওর সময়ে বাংলাদেশে কোনো লেখক তো ছিলোই না, কোনো সিনেমার নায়ক-নায়িকা বা খেলোয়াড় বা ঐরকম অন্য কোনো তারকা ছিলো না। আনিসুজ্জামান স্যার খুব যে নিয়মিত আসতেন মেলায় সেটা নয়, কিন্তু তিনি তো ছিলেন। সৈয়দ হক ছিলেন। আহা, সৈয়দ হক পাঠ যেরকম আনন্দদায়ক, ওকে সামনে থেকে দেখা এবং ওর কথা শোনা সেও ছিল চক্ষু- কর্ণের শুদ্ধ বিনোদন। 

আমার সাথে কখনো দেখা হয়নি, ম্যাসেঞ্জারে কেবল দুইবার কথা হয়েছে, অভিজিৎ রায় ছিল তরুণদের প্রাণ। অভিজিতকে হত্যা করে ওরা যেন তরুণদের প্রাণ হরণ করেছে বই মেলা থেকে। হায়। এখন তো ওরা ঘাতকদের কাছে নতজানু হয়ে আত্মসমর্পণ করেই বসে আছে। অভিজিৎ শারীরিকভাবে নেই তার চেয়েও ভয়াবহ যেটা ওর সকল বই অনানুষ্ঠানিকভাবেই যেন নিষিদ্ধ হয়ে আছে। বইমেলায় ওর কোনো বই পাওয়া যায় না। অথচ উচিত ছিল ওর বইগুলো আলাদা করে বিক্রি করা, ওর নামটা আলাদ ফলক দিয়ে উল্লেখ করা। ঘাতকদের জানানো দরকার ছিলো যে, না তোমরা অভিজিতকে হত্যা করতে পারো, কিন্তু ওকে হত্যা করার সাধ্য কারো নেই। আমর সকলে মিলে ঘাতকদের অসমাপ্ত কাজটা সমাপ্ত করে দিয়েছি।  আরেকজনর কথা আমি একদিন আলাদা করে লিখব- চিত্তরঞ্জন সাহা ও তার মুক্তধারা।

আমার জন্যে তো রিত্তরঞ্জন সাহা ও মুক্তধারাকে ভালোবেসে স্মরণ করা পবিত্র দায়িত্ব। কেন? কেননা মুক্তধারার বই পড়েছি বুদ্ধি বিকশিত হাবার আগে থেকে। মুক্তধারা থেকে ভিপি ডাকযোগে বই কিনেছি সেই সুদূর মফঃস্বল চকরিয়ায় বসে। সেই অর্থে মুক্তধারা ও চিত্তরঞ্জন সাহা কি আমার পিতৃসম শিক্ষক নন? না, প্রকাশকদেরকে সাধারণত কেউ ওই রকম শিক্ষাগুরুর মর্যাদা দেয় না। কেননা ওরা তো ব্যবসায় হেতু বই প্রকাশ করেন। কিন্তু চিত্তরঞ্জন সাহাকে কেবল একজন গ্রন্থ ব্যবসায়ী পরিচয়ে সীমাবদ্ধ রাখবেন? আমি তো সেটা করবো না। ভারাক্রান্ত হয়ে যায় মন। কতজনকে হারিয়েছি। কতোটা ভ্রষ্ট হয়েছে চরিত্র মেলার। তবুও যাবো। একটু শক্ত হয়ে নিই, যাবো বইমেলায়। তাছাড়া আমার কেতাবখানাও রয়েছে। বইমেলায় লেখক দাঁড়িয়ে থাকবে বই হাতে নিয়ে, আসেন ভাই আসেন ভাই একখান নারীবাদ প্রসঙ্গে নিয়ে যান- এটা নাকি নিয়ম হয়েছে! না গেলে হবে? লেখক: আইনজীবী। ফেসবুক থেকে